সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সব সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধ, হচ্ছে না জেলা সম্মেলন
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সব ধরনের সম্মেলন, কমিটি গঠনসহ সব ধরনের সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এ আদেশ বলবৎ থাকবে।
এরফলে নির্ধারিত তারিখ ২৩ ফেব্রুয়ারিও জেলা সম্মেলন অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। রোববার বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় নয়া পল্টনে দলের এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ওই বৈঠকে উপস্থিত সাতক্ষীরা জেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি রহমাতুল্লাহ পলাশ।
গুরুত্বপূর্ণ এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, কেন্দ্রীয় বিএনপি’র প্রকাশনা সম্পাদক ও সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাবিবুল ইসলাম হাবিব, সাতক্ষীরা জেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি রহমতুল্লাহ পলাশ, জেলা বিএনপি’র আহবায়ক সৈয়দ ইফতেখার আলী, সদস্য সচিব আব্দুল আলিম, যুগ্ম আহবায়ক তারিকুল হাসান, যুগ্ম আহবায়ক মৃণাল কান্তি রায়, আইনুল হক নান্টা প্রমুখ।
বৈঠক শেষে রহমাতুল্লাহ পলাশ বলেন, দীর্ঘ পাচ বছর পর বিএনপি'র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এর সম্মতিক্রমে আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়। জেলা সম্মেলনের আগে সব ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌরসভা ও উপজেলা বিএনপির সম্মেলন শেষ করতে নির্দেশনা দিয়ে এক পত্র দেয় কেন্দ্রীয় বিএনপি। সম্মেলনের দায়িত্ব দেয়া হয় খুলনা বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডুকে।
দায়িত্বপ্রাপ্তরা গত ১৫ জানুয়ারি এক পত্রে জেলা সম্মেলনের আগে সাতক্ষীরার চারটি নির্বাচনী আসন এলাকার জন্য চারজনকে আহবায়ক করে চারটি সাংগঠনিক টিম গঠন করে দেন। সেখানে সাতক্ষীরা-১ নির্বাচনী এলাকার জন্য জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক তারিকুল হাসান, সাতক্ষীরা-২ নির্বাচনী এলাকার জন্য জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মৃনাল কান্তি রায়, সাতক্ষীরা-৩ নির্বাচনী এলাকার জন্য জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক হাবিবুর রহমান ও সাতক্ষীরা-৪ নির্বাচনী এলাকার জন্য জেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব আব্দুল আলিমকে প্রধান করে চারটি কমিটি করা হয়। এ আদেশ উপেক্ষা করে বিএনপি’র দুই গ্রুপ সম্মেলন পাল্টা সম্মেলন, কমিটি পাল্টা কমিটি দিতে থাকে দুই পক্ষ। সম্প্রতি শ্যামনগর, কালিগঞ্জ, আশাশুনি ও দেবহাটা উপজেলায় সম্মেলন ও কমিটি ঘোষণা নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা দফায় দফায় সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এমনকি এসব জায়গায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে এসব উপজেলা প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারী করতে বাধ্য হয়। এমন পরিস্থিতিতে চরম ক্ষুব্ধ ও বিব্রত হয় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানসহ কেন্দ্রীয় বিএনপি’র হাই কমান্ড।
জেলা বিএনপি’র যুগ্ম আহবায়ক তারিকুল হাসান বলেন, জেলা বিএনপির সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে রোববার বেলা ১১ টায় সাতক্ষীরার নেতাদের ঢাকায় নিয়ে জরুরী বৈঠকে বসে বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক টিম। সেখানে সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সব ধরনের কার্যক্রম স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত দেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক টিম। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত কোনো পক্ষ কোনো ধরনের কমিটি গঠন বা সম্মেলন করতে পারবেন না। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর অ্যাডভোকেট সৈয়দ ইফতেখার আলীকে আহবায়ক এবং আব্দুল আলিমকে সদস্য সচিব করে ৩৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। আহবায়ক কমিটির ওপর তিন মাসের মধ্যে ইউনিট কমিটিগুলো গঠন করে পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি গঠনের নির্দেশনা থাকলেও পাঁচ বছরেও তা বাস্তবায়ন করতে পারিনি আহবায়ক কমিটি। এনিয়ে তৃণমুলের নেতাকর্মীদের মাঝে চরম ক্ষোভ ও হতাশা তৈরী হয় এবং জড়িয়ে পড়ে গ্রুপিংয়ে। দীর্ঘ সময় পর জেলা বিএনপির সম্মেলনের তারিখ ঘোষনা করলে এই দ্ব›দ্ব উপজেলা, ইউনিয়ন তথা ওয়ার্ড পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ে। কমিটি গঠন নিয়ে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রূপ নেয়। দুই পক্ষ থেকে দেয়া হয় কমিটি-পাল্টা কমিটি এমনকি প্রকাশ্যে দলীয় কর্মসুচি পালন করা হয় পৃথকভাবে।
এমন বাস্তবতায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে জেলার নেতাদের ঢাকায় নিয়ে কেন্দ্রীয় বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক টিম জেলা বিএনপি’র সব ধরনের সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত দেয়া হয়। যা পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। এর ফলে জেলা বিএনপির সম্মেলনও যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে না।
What's Your Reaction?