কালিগঞ্জের মুকুন্দপুর আনছার ভিডিপি ক্লাবের জায়গায় ব্যক্তিগত রাস্তা নির্মাণের চেষ্টা!

Oct 7, 2025 - 20:16
 0  9
কালিগঞ্জের মুকুন্দপুর আনছার ভিডিপি ক্লাবের জায়গায় ব্যক্তিগত রাস্তা নির্মাণের চেষ্টা!

বিশেষ প্রতিনিধি: সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে আনসার ভিডিপি ক্লাব এবং এক প্রবাসীর স্ত্রীর ৩০ বছরের অধিক সময়ের দখলকৃত সম্পত্তিতে এক প্রভাবশালীর ব্যক্তিগত চলাচলের রাস্তা তৈরীর প্রচেষ্টার ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসছে এলাকাবাসী। তাদের দাবি, একজন ব্যক্তির স্বার্থ রক্ষায় উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিজে উপস্থিত থেকে গাছ কেটে ঘেরাবেড়া নির্মাণপূর্বক চলাচলের রাস্তা করে দিচ্ছেন যা এলাকাবাসীর ক্ষোভের কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার মথুরেশপুর ইউনিয়নের মুকুন্দপুর গড়ের হাটখোলা সংলগ্ন আনসার ভিডিপি ক্লাব চত্বরে।

সরেজমিন গেলে আনছার ভিডিপি ক্লাবের সদস্য শেখ আনিসুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম, কবির হোসেনসহ স্থানীয় বেশ কয়েকজন বাসিন্দা জানান, ১৯৯৪ সালে মুকুন্দপুর গড়ের হাটখোলায় আনছার ভিডিপি ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে সদস্য সংখ্যা ১২৪ জন। স্থানীয় এক ব্যক্তির দানকৃত জমিতে ক্লাবটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পাশাপাশি প্রায় ৭শতক জায়গা পাকা প্রাচির ও ঘেরাবেড়া দিয়ে রক্ষণাবেক্ষণ করা ছিল। আনছার ভিডিপি ক্লাবের পিছনে অবস্থিত একটি পুকুর কুয়েত প্রবাসীর রবিউল ইসলামের স্ত্রী আকলিমা বেগম প্রায় ৩৫ বছর যাবত ভোগদখল করছেন। সম্প্রতি ক্লাব কতৃপক্ষের অগোচরে কাজী রফিকুল ইসলাম (৬০) নামে একব্যক্তি নিজের বাড়িতে যাওয়ার পথ তৈরী করতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে উপজেলা ভূমি অফিসে আবেদন করেন। প্রভাবশালী ওই ব্যক্তির স্বার্থ রক্ষার্থে গত ৫ অক্টোবর (রবিবার) বেলা আড়াইটার দিকে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অমিত কুমার বিশ্বাস পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে আনছার ভিডিপি ক্লাবের জমি ও আকলিমা বেগমের দখলকৃত পুকুরের এক প্রান্ত থেকে অপরপ্রাপ্ত পর্যন্ত প্রায় ৬ ফুট প্রশস্ত রাস্তা হিসেবে দেখিয়ে দিয়ে ঘেরাবেড়া দেয়ার ব্যবস্থা করে দেন। এ সময় সেখানে থাকা একটি নিমগাছ ও একটি কদমফুল গাছ কেটে নেন কাজী রফিকুল ইসলাম গং।

 তারা আরও বলেন, কয়েক বছর আগে আশাশুনি থেকে প্রবাজপুর গ্রামে এসে বসতি গড়ে তুলেছেন কাজী রফিকুল ইসলাম। এলাকার মানুষের সাথে তিনি প্রায়ই অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। এখন তিনি সরকারি আনছার ভিডিপি ক্লাবের জায়গায় নিজের ব্যবহারের রাস্তা নির্মাণের অপতৎপরতা চালাচ্ছেন। আনছার ভিডিপি ক্লাবের ব্যবহৃত জায়গা যাতে কেউ ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার করতে না পারে সেব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সুদৃষ্টি কামনা করেন তারা।

আনছার ভিডিপি ক্লাবের সার্টিফিকেটধারী সদস্য শেখ আনিসুর রহমান (৫৫) জানান, তিনি আনছার ভিডিপি ক্লাবের জমির কাগজপত্র পর্যালোচনা ও দখলকৃত জায়গা দিয়ে রাস্তা নির্মাণের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য উপজেলা সহকারী কমিশনারকে অবহিত করলেও তিনি তাতে কর্ণপাত করেননি। পূর্বের পাকা প্রাচীর ও ওই সম্পত্তিতে থাকা গাছ দেখিয়ে তিনি বলেন, অনেকটা ফিল্মি স্টাইলে আনছার ভিডিপি ক্লাবের মতো একটি প্রতিষ্ঠানের জায়গা দখল করে একজন স্বার্থানেষী ব্যক্তির চলাচলের পথ প্রদান করে প্রশাসন পক্ষপাতমূলক আচরণ করেছেন। তিনি আরও বলেন, উক্ত কাজী রফিকুল ইসলামের বাড়িতে যাতায়াতের জন্য আরও দু’টি বিকল্প প্রশস্ত রাস্তা রয়েছে। কিন্তু বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) তে কর্মরত তার এক ছেলে ও দক্ষিণ কোরিয়া প্রবাসী দুই ছেলের অর্থের প্রভাবে তিনি এ অপতৎরতা চালাচ্ছেন যা কোনভাবেই কাম্য নয়।

দীর্ঘকাল যাবত ভোগদখলে থাকা পুকুর ভরাট করে পথ নির্মাণের প্রচেষ্টায় বৃদ্ধা আকলিমা বেগম (৫৭) হতাশা প্রকাশ করে বলেন, একবছর আগে থেকে তার দখলে থাকা পুকুরের ১১শতক জায়গা ডিসিআর নেয়ার জন্য চেষ্টা চালালেও তিনি এখনও পর্যন্ত ডিসিআর পাননি।

 ৬নং ওয়ার্ডের বারবার নির্বাচিত সাবেক মেম্বার, আনছার ভিডিপি ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল সাতক্ষীরা জেলা শাখার সাবেক যুগ্ম সম্পাদক শেখ রিয়াজুল ইসলাম (৫৪) বলেন, মুকুন্দপুর গ্রামের মরহুম গোলাম মাহমুদের ছেলে শেখ রিয়াজুল হক নামে এক ব্যক্তি ৫ শতক এবং তার ওয়ারেশগণ ২শতক জমি ক্লাবে দান করেন। এখানে ক্লাব প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসসহ বিভিন্ন জাতীয় দিবসসমূহ যথাযথভাবে পালিত হয়। আশপাশের বাচ্চারা ক্লাব চত্বরে খেলাধুলা করে। ওই জমিতে সরকারিভাবে ক্লাবের জন্য একটি বহুতল ভবন নির্মাণের প্রচেষ্টা চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রায় ৩৫ বছরের দখলে থাকা আনছার ভিডিপি ক্লাবের জায়গার কাগজপত্রে যদি কোন ত্রুটি থাকে এবং সরকার যদি বন্দোবস্ত দিতে চায় তাহলে নিয়ম অনুযায়ী এ জায়গার বন্দোবস্ত পাওয়ার কথা ক্লাবের, অন্য কাউকে দেওয়া উচিত নয়। শুধুমাত্র একটি পরিবারের যাতায়াতের সুবিধা দিতে আনছার ভিডিপি ক্লাবের জায়গা অন্যকে না দেয়ার জন্য প্রশাসনের নিকট তিনি দাবি জানান।

 ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার কলিম গাজী বলেন, একজনের দানকৃত জমিতে খানা খন্দক ও গর্ত ভরাট করে আনছার ভিডিপি ক্লাব প্রতিষ্ঠা করা হয় ও গাছগাছালি লাগানো হয়। এটা একটা সরকারি ক্লাব। এখানে কারও ব্যক্তিগত স্বার্থ নেই। সরকারি সম্পদ যাতে কেউ ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহারের সুযোগ না নেয় সে ব্যাপারে তিনি প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

 আনছার ভিডিপি ক্লাবের দখলকৃত সম্পত্তির উপরে রাস্তা নির্মাণের ঘটনায় কাজী রফিকুল ইসলামের পরিবারের সাথে যোগাযোগ হলে তারা রাস্তার জন্য জমি ডিসিআর নিয়েছেন বলে জানান। তবে ডিসিআর এর কাগজপত্র দেখাবেন জানালেও পরবর্তীতে না দেখানোর কারণে বিস্তারিত জানা সম্ভব হয়নি।

কালিগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অমিত কুমার বিশ্বাস বদলী হয়ে নতুন কর্মস্থলে চলে যাওয়ায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

এব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুজা মন্ডল বলেন, আনছার ভিডিপি ক্লাবের অনুকুলে যারা জমি দিয়েছিলেন তাদের কাগজপত্র বৈধ ছিল না। এজন্য ওটা এখন সরকারি সম্পত্তি। আনছার ভিডিপি ক্লাব জমি বন্দোবস্ত পাওয়ার জন্য আবেদন করলে তাদের অগ্রাধিকার থাকবে বলে জানান তিনি।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow