দিনে অন্তত ২০ মিনিট নিজেকে সময় দিন
অনলাইন ডেস্ক: ইরেশ যাকের। বাংলাদেশের একজন ভার্সেটাইল চলচ্চিত্র অভিনেতা এবং টিভি অভিনয়শিল্পী। অভিনয়ের পাশাপাশি ব্যস্ততা আছে পারিবারিক ব্যবসা নিয়েও। তবে সব ব্যস্ততার মাঝেই নিজেকে সময় দেওয়ার বিষয়ে পূর্ণ সচেতন তিনি। কাজের মধ্য থেকেই সপ্তাহে চার দিন নিজের জন্য সময় বের করে হাঁটেন এই অভিনেতা। এর মধ্যে সুযোগ পেলেই সপ্তাহের শুক্রবার অংশ নেন ম্যারাথন দৌড়ে। সবশেষ ইরেশ রাজধানীর হাতিরঝিলে ৭.৫ কিলোমিটার দৌড়েছেন। পেয়েছেন মানসিক শান্তিও, যা নিয়ে কথা বলেছেন কালবেলার সঙ্গে।
এ বছরের ৬ নভেম্বর ইরেশ ৪৮ বছর বয়সে পদার্পণ করেন। এই বয়সে তিনি সপ্তাহে চার দিন এক ঘণ্টা করে ব্যায়াম করেন। যার ফলে শারীরিক সুস্থতার চেয়ে মানসিক শান্তি বেশি পেয়ে থাকেন বলে জানান, যা নিয়ে ইরেশ বলেন, ‘আমার বয়স এখন ৪৮। এ বয়সে এসে আমি সপ্তাহে চার দিন এক ঘণ্টা করে ব্যায়াম করি। কিন্তু আমি যদি ২৫ বছর থেকেই এটি নিয়মিত করতাম, তাহলে হয়তো এখন আমি আরও বেশি মানসিক ও শারীরিকভাবে ভালো থাকতাম। তারপরও আলহামদুলিল্লাহ এখন ভালো আছি। তবে সবাই মনে করেন ব্যায়াম করলে একজন মানুষ শারীরিকভাবে অনেক ভালো থাকবেন। কিন্তু না, আমার কাছে মনে হয় শরীরচর্চা করলে আমরা সবচেয়ে বেশি মানসিকভাবে ভালো থাকি। কারণ নিয়মিত হাঁটলে আমাদের মন ভালো থাকে, রাগ কম হয়, কাজের মনোযোগ বাড়ায় এবং সবকিছুতেই কনফিডেন্স বৃদ্ধি হয়। তাই নিয়মিত ব্যায়াম শরীরের চেয়ে মানসিক কাজে বেশি আসে বলে আমি মনে করি।’
ইরেশ পাহাড় ঘুরতে ও পাহাড়ি পথে ট্র্যাকিং করতে ভালোবাসেন। এর জন্য বয়স কোনো বাধা বলে মনে করেন না তিনি। যার অভিজ্ঞতা সবশেষ ম্যারাথন দৌড়ে অংশ নিয়ে পেয়েছেন। এই প্রতিযোগিতায় যে প্রথম হয়েছেন তার বয়স ছিল ৮০ বছর এবং সব থেকে কনিষ্ঠ প্রতিযোগীর বয়স ছিল ৭ থেকে ৮ বছর। এই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে এ অভিনেতা আরও বলেন, ‘আমি সুযোগ পেলেই ম্যারাথন দৌড়ে অংশ নিই। সবার সঙ্গে দৌড়াতে আমার ভালো লাগে। আর এখানে নিজের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার সুযোগ থাকে। আমরা তো আর ম্যারাথন চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিচ্ছি না। আমরা যে যার স্থান থেকে কতটা দ্রুত শেষ করতে পারি সেই চেষ্টাই থাকে বেশি। যেমন এবার আমি যতটা দ্রুত শেষ করেছি সামনের বার আরও আগে শেষ করতে চাই—এটাই আমার লক্ষ্য। এ ছাড়া আমার পাহাড় ট্র্যাকিং করতে ভালো লাগে। মানসিকভাবে বয়স নিয়ে সবারই একটা দ্বিধা থাকে। যে বয়স হয়ে গেলে এসব কারা যাবে কি না। কিন্তু এবার আমি দেখলাম ম্যারাথন দৌড়ে যে প্রথম হয়েছেন তার বয়স ছিল ৮০ বছর, সব থেকে কনিষ্ঠ প্রতিযোগীর বয়স ছিল ৭ থেকে ৮ বছর এবং আমার সমান সময়ে যে শেষ করেছে তার বয়স ৬০ বছর। তখন আমি একটি বিষয় বুঝতে পেরেছি, কোনো কিছু করতে শরীরের শক্তি নয়; মানসিক শক্তিই বেশি প্রয়োজন।’
সবশেষ ইরেশ মনে করেন। ঢাকা একটি শহুরে জঙ্গল। যেখানে সবকিছুর চাপই তুলনার চেয়ে অনেক বেশি। তাই এই শহরে সুস্থভাবে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে দিনে অন্তত ২০ মিনিট নিজেকে সময় দেওয়া উচিত। তাহলেই মানসিকতার পাশাপাশি শারীরিকভাবেও সুস্থ থাকা যাবে। এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘এই শহরে সবকিছুরই চাপ বেশি। এই চাপের জন্য দিনের অনেকটা সময় আমরা মানসিকভাবে খুব বিরক্ত থাকি। মানুষের সঙ্গে অল্পতেই রেগে যাই। তাই শুধু মানসিক শান্তির জন্য ২০ মিনিট হাঁটার মাধ্যমে আমরা যদি নিজেকে সময় দিই, তাহলেই আমরা অনেক ভালো থাকব বলে আমি মনে করি। সুস্থ থাকার জন্য শুধু শরীর ফিট রাখলেই যে হবে, তা আমি কখনো বিশ্বাস করি না। কারণ আমার বয়স যখন ৩৫ ছিল, তখন আমার ওজন ছিল ১২০ কেজির মতো। তাতে আমার শারীরিকভাবে কোনো অসুবিধা হয়নি। তাই আমি বিশ্বাস করি নিয়মিত ব্যায়ামে শরীরের চেয়ে মনের উপকার হয় বেশি।’
নতুন বছরের জানুয়ারিতে আরও একটি ম্যারাথন দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নেবেন ইরেশ। তার মতে নতুন প্রজন্মের এ বিষয়গুলো নিয়ে আগ্রহ থাকা জরুরি। কারণ পৃথিবী এখন অনেক অস্থির। মানুষের মানসিকতা যন্ত্রণা বেড়েছে। এ থেকে বাঁচতে তরুণদেরই সচেতনভাবে এগিয়ে আসতে হবে। তা হলে যেমন শান্তি বাড়বে, তেমনই কমবে অসুস্থতার সংখ্যাও।
ইরেশ একজন জাত অভিনেতা। কাজের মাধ্যমে যার প্রমাণ বারবার রেখেছেন। তাই নতুন বছর অভিনয় দিয়ে আরও এগিয়ে যেতে চান তিনি।
What's Your Reaction?