ইটবৃষ্টির মধ্যে সংঘর্ষ থামাতে দৌড়ে গেলেন শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার

Jan 23, 2025 - 17:07
Jan 25, 2025 - 13:33
 0  8
ইটবৃষ্টির মধ্যে সংঘর্ষ থামাতে দৌড়ে গেলেন শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার
সাতক্ষীরার শ্যামনগরের ইউএনও মোছা: রনী খাতুন প্রশসংশায় সর্বস্তরের জনগণ

এস, এম, মোস্তফা কামাল: সাতক্ষীরার শ্যামনগরে বিএনপির ২ পক্ষের বিরোধের জেরে ১৪৪ ধারা জারীর অবস্থায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছাঃ রনী খাতুন প্রশাসনিক কর্মকান্ডে প্রশংসায় পঞ্চমুখ। রীতিমত চমকে দেয়ার মত এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন শ্যামনগরের উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোছাঃ রনী খাতুন। ঢাল সড়কি নিয়ে সড়কের দুই প্রান্তে অবস্থান নিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে রীতিমত বৃষ্টির ন্যায় ইট নিক্ষেপ চলছিল। পুলিশ ও সেনাবাহিনী কিছুটা নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চেষ্টা চালাচ্ছেন সংঘর্ষে লিপ্ত পক্ষদ্বয়কে নিবৃত করতে। এরই মধ্যে গাড়ি থেকে নেমে জ্যাকেট কিংবা হেলমেট ছাড়াই দৌড় জুড়লেন উভয় পক্ষের মধ্যবর্তী স্থানের উদ্দেশ্যে। রীতিমত চমকে দেয়ার মত এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন শ্যামনগরের উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোছাঃ রনী খাতুন। একজন নারী কর্মকর্তা হয়েও কোন ধরনের নিরাপত্তা সামগ্রী ছাড়াই 'বাটল ফিল্ডে' তার এমন উপস্থিতি চমকে দিয়েছে সবাইকে। সাহসিকতাপূর্ণ তার এমন ভূমিকার জন্য সাধারণ মানুষসহ দু'পক্ষই রীতিমত তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ।

বুধবার (২২ জানুয়ারি)  এমন দুঃসাহসিক কাণ্ড ঘটিয়ে রনী খাতুন এখন শ্যামনগরের মানুষের কাছে ভাইরাল ইউএনওর খেতাব পেয়েছেন।

জানা যায়, বিএনপির কমিটি নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে দু'পক্ষের মধ্যে বেশ উত্তেজনা চলছে। ইতোমধ্যে উপজেলা বিএনপির বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদ পন্থী নেতাকর্মীদের সাথে সাধারণ সম্পাদক সোলায়মান পন্থীদের দু'দফা সংঘর্ষ হয়েছে গত ১৯ ও ২০ জানুয়ারি। 

এসবের ধারাবাহিকতায় বুধবার উভয় পক্ষ শ্যামনগর উপজেলা সদরে পৃথক কর্মসূচি আহবান করায় উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার  মোছাঃ রনী খাতুন উপজেলা সদরে ১৪৪ ধারা জারি করেন। বংশীপুর থেকে নেতাকর্মীরা শ্যামনগরে প্রবেশের পথে প্রশাসনের বাধায় পিছু হটে। একপর্যায়ে তারা ফিরে যাওয়ার সময় ইসমাইলপুর এলাকায় পৌঁছে প্রতিপক্ষ গ্রুপের সদস্যদের সাথে সংঘর্ষে জড়ায়। এ সময় খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে নারী কর্মকর্তা নিজের দেহরক্ষী আনসার সদস্যসহ সেখানে উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের পিছু ফেলে দৌড়ে চলে যান সংঘর্ষের মধ্যে। এসময় তার পাশে থাকা সাইফুল নামের এক আনসার সদস্য বুকে ও শ্যামনগর থানার ওসি হুমমায়ুন কবীর পায়ে ইটের আঘাতপ্রাপ্ত হলেও দ্রুত মাঝখানে পৌঁছে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। এসময় তার উপস্থিতিতে ক্ষুব্ধ পক্ষদ্বয় কিছুটা নিবৃত হলে সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ আল রিফাতকে সাথে নিয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশের সহায়তায় উভয় পক্ষকে ঘটনাস্থল থেকে হটিয়ে দেন।প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বিকাল সাড়ে চারটার দিকে বিএনপি নেতা সোলায়মান কবীরের নেতৃত্বে একটি মিছিল বিএনপি নেতা আশেক-ই এলাহী মুন্নার বাড়ির অতিক্রম করছিল। এসময় অজ্ঞাত স্থান থেকে মিছিলের উপর একটি লাঠি ছুড়ে মারার পর দু’পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। উভয় পক্ষ ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. রনী খাতুন ও সহকারী কমিশনার (ভুমি) আব্দুল্লাহ আল রিফাত পুলিশ ও সেনাসদ্যদের নিয়ে উভয় পক্ষকে নিবৃত করার চেষ্টা চালায়।

এসময় শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ হুমায়ুন কবীরসহ উভয় পক্ষের অন্তত ২২জন আহত হয়। একপর্যায়ে বিএনপি নেতা আশেক-ই এলাহী মুন্না ও আ.লীগ কর্মী আহমদ আলী কয়ালের বাড়ি ভাংচুর করা হয়।

বিএনপি নেতা সোলায়মান কবীর জানান, শান্তি সমাবেশে যাওয়ার পথে আলিম, শাহ-আলম ও মফুসহ ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নেয়া কিছু আ.লীগের কর্মীকে নিয়ে বিলুপ্ত কমিটির নেতারা তাদের উপর হামলা করে। একই গ্রুপের নেতৃতে গত ১৯ ও ২০জানুয়ারি তাদের ১৭জন নেতাকর্মীকে রক্তাক্ত করা হয়েছিল। বুধবার হামলার ঘটনায় তাদের ১২জন আহত হলেও সবুর, মফিজুর, সোহাগ, সাইফুল, আব্দুল্লাহ ও হাবিবুরের অবস্থা গুরুতর। জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আব্দুল আলিমের উস্কানীতে হামলা হয়েছে দাবি করে সোলায়মান কবীর সাংগঠনিক টিমের প্রধান আব্দুল আলিমকে শ্যামনগরে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করার কথা জানান। উপজেলা বিএনপি নেতা আশেক-ই এলাহী মুন্না জানান, বুধবার বিকালে শ্যামনগর সদরে ছাত্রদলের উদ্যোগে বিএনপির ৩১দফা শীর্ষক সভা চলছিল। সভায় হামলার উদ্দেশ্যে রওনা দিলেও পথিমধ্যে সোলায়ামান কবীর, লিয়াকত আলী বাবু, সফিকুল ইসলাম দুলু ও আব্দুল ওহাবের নেতৃত্বে তার বাড়িতে হামলা হয়। এসময় আ’লীগে যোগদানকারী সাদেকুর রহমানের সন্ত্রাসী বাহিনী ঢাল রামদা লাঠি হকিষ্টিক ককটেল নিয়ে হামলায় অংশ নেয় বলেও তিনি দাবি করেন। 

শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. হুমায়ুন কবীর জানান, নিজেসহ দু’পক্ষের কয়েকজন আহত হয়েছে। রাত আটটা পর্যন্ত কেউ কোন অভিযোগ দেয়ার কথা জানায়নি। পুলিশ ঘটনাস্থলে অবস্থান করে দু’পক্ষকে সরিয়ে দিয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছা. রনী খাতুন জানান, পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত ১৪৪ ধারা বহাল থাকবে। পুলিশ ও সেনা সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়স্ত্রণে আনতে তাকে আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করেছে। তার সাথে থাকা আহত আনছার সদস্যকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে বলেও তিনি নিশ্চিত করেন।  

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow